Our Social Activity
৫১টি সতীপীঠের অন্যতম পীঠ স্থান : বীরভূম,লাবপুর ৫১ টি সতীপীঠের অন্যতম এই দেবী রীঁ ফুল্লরা মাতা নামে পূজিতা। সতীর ওষ্ঠ এখানে পড়েছিল। বোলপুরের পড়ের স্টেশন প্রান্তিক এই স্টেশনে নেমে টোটো বা গাড়ি করে ২৩ কিমির যাত্রা পথ, সকাল ৬টা কাকা ভাইপো মিলে বেড়িয়ে পড়লাম। শিয়ালদহ থেকে সকাল সাতটা কুড়ির ১৩১৮৭ মা তাঁরা এক্সপ্রেস,সময় মতো ট্রেনে চরে বসলাম ট্রেন সময়েই রওনা হল। শিয়ালদহ থেকে প্রান্তিক পৌছাতে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘণ্টার ও বেশি তাই ট্রেন চলা শুরু করলেই আমরা আমাদের ফেলে আশা ঘুমটা পূরন করার জন্য অগ্রসর হলাম। ঘুম তখনো চোখে হালকা হলকা রয়েছে জানলা দিকে তাকিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছি বাইরের দৃশ্য দেখে মনেই হচ্ছে যে আমরা কলকাতা থেকে অনেক কিলোমিটার দূরে চলে এসেছি হঠাৎ একটা বাঁশির সুন্দর সুর কানে আসতে লাগলো সময়ের সাথে সাথে বাঁশির মধুর সুর আমার কাছে আসতে লাগলো, ততক্ষনে আমার ঘুম কেটে গেছে মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি সুরটা কোন গানের ভাবতে ভাবতে লোকটি ঠিক আমার পিছনে এসে দাঁড়ালো, লোকটি আসধারণ বাঁশি বাজায়, চট করে ব্যেগ থেকে ক্যামেরাটা বের করে একটি ছোট্ট ভিডিও তুলে নিলাম। তার সাথে সাথে একটু আলাপ ও সেরে নিলাম তার সাথে। মানুষটি সত্যি খুব সুন্দর তার জন্যই হয়তো তার বাঁশির সুর ও এত সুন্দর। বোলপুর চলে এসেছে এর পড়ের স্টেশনে নামবো আমরা,একটু একটু খিদেও পেয়েছে স্টেশনে নেমে একটু খানি এগিয়ে একটি ছোট্ট হোটেলে বসে পেট ঠেসে সবজি ভাত খেয়ে টোটো ধরে চলাম সতীপীঠের উদ্দেশ্যে। ২৩ কিমি রাস্তা যেন কি ভাবে কেটে গেল চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে । থাকার জন্য মন্দিরের পাশে খুব সুন্দর একটি লজ এর ব্যবস্থা আছে, গিয়ে উঠলাম । রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেল বেলা মন্দিরের চার পাশ একটু ঘুরে নিলাম। খুব সুন্দর একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, সন্ধ্যার পুজো দেখে পড়ের দিনের কাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য লজ এ চলে এলাম। ভ্রমণের সাথে সাথে একটি কাজের উদ্দ্যেশ নিয়ে আমাদের ওখানে যাওয়া। এটি শুধু মাত্র একটা ভ্রমণ নয় এই ভ্রমণের পেছনে ছিল কিছু মানুষের মহৎ উদ্দেশ্য। এই ভ্রমণটি আমি আর আমার কাকা বাদে ছিলো আরও কয়েকশো জনের। ভ্রমণের প্রথম দিন আমার এইভাবেই শেষ হল। দ্বিতীয় দিনের জন্য আমি ও আমাদের যতো লোক ছিল সবাই খুব উৎসাহিত ছিল......আজকে আমাদের দ্বিতীয় দিন। রাতে একটুও ঘুম হয়নি, ভোরের দিকে চোখটা সবে লেগেছিল রুমের বাইরে কোলাহল শুনে উঠে বসলাম,বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম কলকাতা থেকে যাদের আসার কথা ছিল তারা সবাই চলে এসেছেন। এই বার ঠিক ভ্রমণের উদ্দ্যেশে বের হইনি, বেলঘরিয়ার একটি সংস্থা “দিশারী ড্রাইভার সেন্টার” যারা একটি ভান্ডারার আয়োজন করেছিল, সেখানে ছিল প্রায় সকল গ্রামবাসীর জন্য দুপুরের খাবার আর কিছু মহিলাদের জন্য বস্ত্র বিতরণের ব্যবস্থা। সেই অনুযায়ী সব কাজ চলছে, সকাল ১১টা মানুষ জনের আসা শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে মহিলাদের বস্ত্র বিতরণ শুরু হয়ে গেছে, আমি আমার মতো এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি, এ এক আলাদা অনুভূতি। দুপুর ১টা, খাবার দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। কিছু বস্ত্র আর একমুঠো খাবারের জন্য মানুষ কি না করতে পারে এখানে না এলে হয়তো বুঝতে পারতাম না। এক দিকে রান্না হচ্ছে আর এক দিকে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। এই পৃথিবীতে খারাপ মানুষের পাশাপাশি অনেক ভালো মানুষ আছে এদের দেখলে বোঝা যায়। নিজেরা সকাল থেকে কিছু না খেয়ে আনন্দের সাথে পরিবেশন করে যাচ্ছে। প্রচুর মানুষের ভীড় মনে হচ্ছে যেন মেলা বসেছে। দিনের শেষে ভীর কমতে আমারাও খাওয়া দাওয়া সেরে সব জিনিস গাড়ীতে তুলে সবাই একটু একটু বিশ্রাম নিয়ে যে যার সিটে গিয়ে বসলাম তখনও মানুষের ভীড় আমাদের গাড়ির চার পাশ থেকে সরেনি। বিকেল ৫টা, আমাদের গাড়ি রওনা দিল কোলকাতার দিকে। বোলপুর, বর্ধমান পার করে গাড়ি দাঁড়াল শক্তিগড়ে, শক্তিগড়ের ল্যাংচা খাবার জন্য। ততক্ষণে নীল আকাশ কালো হয়েছে। অনেক নাম শুনেছিলাম শক্তিগড়ের ল্যাংচার, এক কামড় বসাতেই বুঝতে পারলাম কেন এত সুনাম। গোটা কয়েক ল্যাংচা খেয়ে গাড়ীতে এসে জানলার ধারে বসে এমন ঘুম দিলাম চোখ যখন খুলল তখন গাড়ী ডানলপ সিগনালে দাঁড়িয়ে। বাড়ি পৌছাতে সে দিন ১১টা বেজে ছিল। এই দুদিনের ছোট্ট ভ্রমণ অনেক কিছু শিখিয়ে দিল, কে বা কিভাবে জানিনা না!! কিন্তু মনে হচ্ছে ওই জায়গায় ওদের সাথে না গেলে অনেক কিছু অজানা থেকে যেত, আমাদের এই ব্যস্ত সমাজের থেকে বহু দূরে বসবাস করা ওই মানুষ গুলো সত্যি একটু আলাদা। মানুষ গুলোর সাথে পরিচয়ের পর থেকে কিছু প্রশ্ন ঘুরে বেরাচ্ছে আমার মনের গভীরে, হয়তো এর উত্তর খুজে বের করতে পারবো কোন এক দিন। এই ভাবেই কিছু প্রশ্ন আর কিছু সুন্দর স্মৃতি নিয়ে আমার ভ্রমণ সমাপ্ত হল ।। ভ্রমণ মানে কিছু নতুন গল্পের আবির্ভাব কিছু নতুন মানুষের জন্ম নতুন ভাবে, এরকমই দুটি মানুষের আবির্ভাব হল এই ভ্রমণে, এদেরকে ও এদের কিছু কথা হয়তো কোন দিনও মাথা দিয়ে বের করতে পারবো না। খুবই সাধারণ দেখতে পেশায় সহকারী রাঁধুনী। থা। বিঃ দ্রঃ - “দিশারী ড্রাইভার সেন্টার” এই সংস্থা প্রায়শই এই ধরনের সেবামূলক কাজ আয়োজন করে থাকে। এই সংস্থার ব্যাপারে বিশদ জানতে বা এই সংস্থার সাথে যুক্ত হতে ইচ্ছুক থাকলে নীচের দেওয়া ছবি থেকে বিস্তর তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।।